প্রচ্ছদবিবিধ

কবিতা ভাবনা- জান্নাতুল মাওয়া

কবিতা হলো মানবমনের এক অনির্বচনীয় অভিব্যক্তি। তা শুধু শব্দের মিল, ছন্দ কিংবা উপমার কাঠামোতে বাঁধা নয়, বরং কবিতা হলো অনুভবের আকাশে মুক্ত উড়ান। কবিতা আমাদের চিন্তা, উপলব্ধি এবং আবেগকে এক বিন্দুতে এনে জীবনের গভীরতাকে স্পর্শ করতে শেখায়।

কবিতা লিখতে গেলে প্রথমেই আসে মনের ভাব। একেক কবির ভাবনার জগৎ একেক রকম। কেউ অনুভব করেন প্রেমের অমৃত রসে সিক্ত হওয়া, কেউবা জীবনের দুঃখ-যন্ত্রণার চিত্রায়ণ করেন কবিতার পাতায়। আবার কেউ কেউ কবিতায় সমাজ, রাজনীতি কিংবা মানুষের অস্তিত্বের সংকট তুলে ধরেন। কবিতার এই বৈচিত্র্যই তাকে এতটা জটিল এবং একত্রে সরল করে তোলে।

কবিতার প্রতি আমার আকর্ষণ সেই ছোটবেলা থেকে। শব্দের খেলায় মত্ত হয়ে যখন প্রথম নিজের বাবাকে নিয়ে একটি কবিতা লিখি, তখনই বুঝতে পারি যে কবিতা শুধুমাত্র নিজের কথা বলার একটি মাধ্যম নয়, এটি একটি সমাজের কথা বলার হাতিয়ারও হতে পারে। এটি হতে পারে প্রতিবাদের সুর, হতে পারে যুগ যুগ ধরে মুখ ফুটে বলতে না পারা হৃদয়ের ব্যাকুল অনূভুতি।যার প্রতিটি  শব্দে লুকিয়ে থাকে আমাদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, এবং যুগযন্ত্রণা।

কবিতা লেখার সময় ভাবতে হয়, এই শব্দগুলো কীভাবে পাঠকের মনে আঘাত হানবে,প্রতিটা লাইন পড়ার পরে বা শুনার পরে কেমন অনুভূতি পাঠক বা শ্রোতার মনে সৃষ্টি হবে। প্রতিটি কবিতা যেন পাঠকের মনে একটি প্রশ্ন তৈরি করে, তাকে ভাবতে বাধ্য করে। হয়তো উত্তর খুঁজে পায়, হয়তো পায় না, তবুও সেই ভাবনার ছাপ থেকেই যায়। একজন কবিতাপ্রেমী হিসেবে আমি বিশ্বাস করি, কবিতার শক্তি শুধু আবেগের প্রকাশ নয়, এটি মানুষের মননকে আলোকিত করার এক মাধ্যম।

কবিতা তাই কখনোই শুধুমাত্র শব্দের সাজসজ্জা নয়, এটি হৃদয়ের নীরব আর্তনাদ, যা একান্তভাবে আমাদের সত্তাকে উন্মোচন করে এবং আত্নাকে প্রশান্তি দেয়।

*ইংরেজি বিভাগ, কক্সবাজার সরকারি কলেজ।

 

আরো পড়ুন- কবি জামিল হাদীর সাক্ষাৎকার